বিশ্ব ফুটবলের সব থেকে বড় আসর হলো বিশ্বকাপ ফুটবল। চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় জমজমাট এই আসর। ২০১৮ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ায়। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই আসরটিতে বাংলাদেশের অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়নি এখনও। অদূর ভবিষতে সুযোগ সৃষ্টির সম্ভবনাও কম। তবে বিশ্বকাপ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফুটবল জনপ্রিয় খেলা। আর বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর আসলেই উন্মাদনার জোয়ারে ভাসে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। মানুষের মধ্যে উৎসবের উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। বিশেষ করে পেলের দেশ ব্রাজিল আর ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনার সমর্থন বাংলাদেশে বেশি।
এছাড়া আছে জার্মানি ও ইতালির সমর্থকও। মাসব্যাপী বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের মতো রাজনৈতিক দলের নেতারাও সময় করে খেলা দেখেন উল্লাস করেন তর্ক-বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েন ফুটবল খেলা নিয়ে। এই তর্ক কোনও কোনও রাজনীতিকের ক্ষেত্রে নিজ গৃহেও চলে। অন্যদের মতো নেতারাও খেলা-পরবর্তী বিশ্লেষণও কম করেন না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতির মাঠে অবস্থান বিপরীত মেরুতে হলেও বিশ্ব ফুটবলের মাঠে তারা দু’জনই রয়েছেন একই কাতারে। বিশ্বকাপ ফুটবলে দু’জনেরই পছন্দের দল ফুটবলের কালো মানিক পেলের দেশ ব্রাজিল। দু’নেত্রীর পাশাপাশি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের পছন্দের ফুটবল টিম ব্রাজিল।
এদিকে দুই দলের শীর্ষ নেতার পছন্দের দল একই হলেও দল দু’টির অন্য নেতাদের পছন্দ যে ব্রাজিল, তা নয়। বাংলাদেশের অন্য সাধারণ মানুষের মতো দুই দলের নেতাদের মধ্যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকই বেশি। আর আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাশাপাশি অন্য দলগুলোর নেতাদের বড় অংশই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক।
ভালো টিম থেকে সমর্থন করবেন স্পিকার
বিশ্বকাপ ফুটবলে যে দল ভালো করবে তার পক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি জানান, কাজের ফাঁকে যতদূর সম্ভব সুযোগ করে খেলা দেখার চেষ্টা করবেন। সুনির্দিষ্টভাবে কোনও দলের প্রতি তিনি সমর্থন করেন না। যে দলগুলো ভালো খেলবে তাদের থেকে একটি বেছে নেবেন তিনি। তবে, স্পিকারের সুনির্দিষ্ট দল না থাকলেও তার পরিবারের অন্য তিন সদস্যের রয়েছে নিজস্ব পছন্দের ফুটবল দল। তার স্বামী ফার্মাসিস্ট সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন টিটু আগাগোড়োই ব্রাজিলের সমর্থক। স্পিকারের মেয়ে লামিয়া শিরীন হোসেনের খেলাধুলার বিষয়ে খুবই আগ্রহ রয়েছে। বিশ্ব ফুটবলে তার পছন্দের দল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন। স্পিকারের ছেলে সৈয়দ ইবতেশাম রফিক হোসেনের এবারের পছন্দ ফ্রান্স দল। তবে, দল হিসেবে ফ্রান্স পছন্দ করলেও সে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দেশেরই জার্সি কিনেছেন বলেও স্পিকার জানান। সেই হিসেবে শেষ পর্যন্ত ছেলের পছন্দ কোন দেশের মধ্যে স্থির হয়, তা নিয়ে স্পিকার নিজেও সংশয়ে রয়েছেন।
আ. লীগের কে কাকে পছন্দ করেন
দরজায় কড়া নাড়ানো এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় কে কোন দলের সমর্থন করেন। কীভাবে উপভোগ করেন ফুটবল আসর। নেতাদের স্ত্রী, সন্তানরা কোন দেশের সমর্থক, তাও জানার চেষ্টা করা হয়। খেলা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের ঝগড়া, বিবাদ হয় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় নেতাদের। প্রতিবেদকের কাছে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান তাদের পছন্দের দলের কথা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমর্থন করেন ফুটবলের জাদুকর কালো মানিকের দেশ ব্রাজিলকে। জানা গেছে, শৈশব থেকেই পেলের কথা শুনতে-শুনতে প্রধানমন্ত্রী ভক্ত হয়ে যান ব্রজিলের। তিনি ব্রাজিলের সমর্থক হলেও তার দলের অনেক নেতাকেই দেখা গেছে, ফুটবল বিশ্বের আরেক রাজা ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করতে। রাজনীতিতে দলের সবাই শেখ হাসিনার পছন্দ-অপছন্দের সঙ্গে নিজের মিল রেখে চলতে চেষ্টা করে যান সর্বদায়। বিশ্বকাপ ফুটবলে দেখা যায় শেখ হাসিনার পছন্দের সঙ্গে অমিল রয়েছে অনেক কেন্দ্রীয় নেতার। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, তার পছন্দের ফুটবল দল আর্জেন্টিনা। তিনি খেলা দেখেন। আর্জেন্টিনার খেলা হলে তো কথাই নেই।
সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ জার্মানির সমর্থক। তবে, তার সন্তানদের পছন্দে ভিন্নতা রয়েছে। এক ছেলে রয়েছেন ব্রাজিলের সমর্থক। তিনি জানান, একইসঙ্গে দেখা হয়ে ওঠে না বিধায় খেলা চলার সময় সমর্থন নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় না। তবে, খেলা নিয়ে একই টেবিলে বসে যখন আলোচনা ওঠে, তখন তাদের তুমুল বিতর্ক হয়।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকও সমর্থন করেন আর্জেন্টিনাকে। তিনিও খেলা দেখেন মনযোগ দিয়ে। আর্জেন্টিনার খেলার দিন নিজেকে ফ্রি রাখার চেষ্টা করেন জানান তিনি। অবশ্য সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ফারুক খান সমর্থন করেন জার্মানিকে। ওই তিন নেতাই জানান তারা বিশ্বকাপ ফুটবলের সব খেলায় দেখবেন।
উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু কোনও দলকে সমর্থন করেন না। তবে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ ফুটবলের সব খেলাই তিনি দেখবেন। তিনি জানান সর্বশেষ যে দল বিশ্বকাপ জিতে ঘরে নিয়ে যাবেন, তিনি সেই দলকে সমর্থন করবেন।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি খেলা দেখি না ও কোন দলের সমর্থকও নই।’ দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পছন্দ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে গেছে। তিনিও ব্রাজিল দলের সমর্থক। সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জন প্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সমর্থন করেন ব্রাজিলকে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ ব্রাজিল সমর্থন করেন। অন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ব্রাজিলের সমর্থক হলেও তার স্ত্রী আর্জন্টিনার সমর্থক। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক একে এম এনামুল হক শামীম ব্রাজিল সমর্থক। অবশ্য তার স্ত্রী ও ছোট কন্যা আর্জেন্টিনাপ্রেমী। তবে বড় কন্যা বাপের দল ব্রাজিলকে সমর্থন করেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ব্রাজিলের সমর্থক। তবে তার স্ত্রী আর্জেন্টিনার সমর্থক। এই দম্পতির একমাত্র কন্যা তুষার আদ্রি সমর্থন করেন এশিয়ার দল জাপানকে।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান ফুটবলের বড় আসরে বাংলাদেশ নেই বলে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে তার ভেতরে কোনও উন্মাদনাও নেই। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলের সব খেলাই তিনি দেখেন। তিনি জানান, তার স্ত্রী অবশ্য আর্জেন্টাইন সমর্থক।
বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, বিশ্বকাপ ফুটবলে তিনি কোনও দেশেরই সমর্থক নন। তবে খেলা দেখবেন তিনি এবং যে দল এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ ঘরে তুলতে পারেনি এমন একটি দেশ এবার ট্রপিটি নিয়ে যাক। অবশ্য, তার স্ত্রী আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। আওয়ামী লীগের উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল দুজনই আর্জেন্টিনার সমর্থক। তারা দুজনই একসঙ্গে খেলা দেখেন। অপু উকিল বলেন, ‘ক্রিকেট খেলার চেয়ে ফুটবল খেলা অনেক বেশি পছন্দের।’
আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী ব্রাজিল সমর্থক। তার পরিবারের সদস্যদেরও পছন্দ ব্রাজিলের। দলটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশীদও ব্রাজিলের সমর্থক। খেলা দেখতে তিনি ইতোমধ্যেই রাশিয়া চলে গেছেন।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘পছন্দের দল আর্জেন্টিনা।’ তবে তার স্বামী ও দুই সন্তান ব্রাজিল সমর্থক। খেলা দেখতে গিয়ে তার ঘরে একটু বাড়তি উন্মাদনা দেখা দেয়। দলটির উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ব্রাজিল সমর্থক। তার স্ত্রী আর্জেন্টিনা সমর্থক। তাদের একমাত্র কন্যা তার সঙ্গে আগে ব্রজিলের সমর্থকই ছিল পরে তার স্ত্রী কন্যাকে বুঝিয়ে আর্জেন্টিনার পক্ষে নিয়ে গেছেন।
সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবার জার্মানির সমর্থক। তবে এর আগের বিশ্বকাপে তিনি স্পেনের সমর্থক ছিলেন। তিনি জানান, খেলা দেখে সমর্থন ঠিক করেন তিনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার পছন্দের দল বিশ্বকাপ জয়ী হয় বলে জানান তিনি।
ছেলের পছন্দের দলকে সমর্থন করবেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি জানান, কোন দেশের ফুটবল দলকে সমর্থন করবেন তা ঠিক করেননি। তবে বেলজিয়াম, স্পেন, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও জার্মানির খেলা দেখবেন। শেষ পর্যন্ত তার ছেলে যে দলের সমর্থন করবে তিনিও সে দলেরই সমর্থক হবেন।
বিএনপির পছন্দের ফুটবল দল
বিশ্ব ফুটবলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মিল রয়েছে বিএনপির মহাসচিবের পছন্দে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রাজিল দলের সমর্থক। তিনি জানান, সব সময়ই তার পছন্দের দল ব্রাজিল। তিনি ব্রাজিলের সঙ্গে আছেন। হারুক জিতুক এই দলের সঙ্গেই থাকবেন। সময় করে ব্রাজিলের সবগুলো খেলা দেখার চেষ্টা করবেন বলেও তিনি জানান। তার সন্তানেরা ব্রাজিলের সমর্থক বলেও জানান এই নেতা। সন্তানদের সঙ্গে বসে খেলা দেখবেন বলেও জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের কোনও একক দল সমর্থন নেই। ফুটবলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা—দুই দলই তার পছন্দের তালিকায়। এর বাইরে ইউরোপীয় দেশ জার্মানিকে সমর্থন করেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপ এ তিন দলের মধ্যে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। তবে এই তিন দলের মধ্যে কেউ না থাকলে যে দলটি জিতবে তার প্রতি সমর্থন জানাবেন বলেও জানান।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান দেশ নয়, পছন্দ করেন খেলোয়াড়দের। তিনি জানান, বাংলাদেশ থাকলে নিজের দেশকে সমর্থন করতাম। তাই এখন দেশ নয়, ব্যক্তি খেলোয়াড় খেলা দেখতে পছন্দ করি। মেসি, নেইমার, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর খেলা তার পছন্দ বলে জানান। মঈন খানের মতো দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও কোনও দল সমর্থন করেন না। তিনি মেসি, নেইমারের খেলা পছন্দ করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছোটবেলা থেকেই ব্রাজিলের সমর্থক। তিনি বলেন, আগেও ব্রাজিল পছন্দ করি এবারও তার সঙ্গে আছি। ভবিষ্যতেও থাকবো ব্রাজিলকে নিয়ে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান আর্জেন্টিনা সমর্থন করেন। আরেক ভাইস চেয়ারম্যান বকরতউল্লাহ বুলু আর্জেন্টিনা দলের সমর্থক। বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন জার্মানির সমর্থক। দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার আর্জেন্টিনা সমর্থন করেন। তিনি আশা করেন, এবার এই দলটি বিশ্বকাপ জিতবে। বিএনপির ক্রিড়া সম্পাদক আমিনুল হক ব্রাজিলকে সমর্থন করেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ চৌধুরী এ্যানী জার্মানির সমর্থক। তিনি আশা করেন, এবারও জার্মানি বিশ্বকাপ নেবেন।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল
বিকল্পধারা বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পছন্দ ইউরোপীয় দেশ জার্মানি। আগে তিনি পশ্চিম জার্মানি পছন্দ করতেন। দুই জার্মান এক হওয়ার পরও তিনি জার্মানিকেই নিয়েই আছেন। তিনি বলেন, জার্মানি জিন্দাবাদ। আশা করি, এবার জার্মানি চ্যাম্পিয়ান হবে।
জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান গোলাম মো কাদের আর্জেন্টিনা। তার স্ত্রী ও ছেলে ব্রাজিলের সমর্থক।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব কোনও দেশ বা দল নয়, ফুটবলের সমর্থক। তিনি জানান, বাংলাদেশ থাকলে নিজের দেশকে সমর্থন করতাম। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ নেই তাই নির্দিষ্ট কোনও দলের সমর্থক নয়। তবে সব খেলায় দেখবো। যে দল ভালো খেলবে, তাদের সমর্থন করবো।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদও নির্দিষ্ট কোনও দলের সমর্থক নন। তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে দল ফুটবল বিশ্বকাপে নেই। তাই যে দল ভালো খেলবে তাদের সমর্থন করবো। তবে মেসিসহ আরও কয়েকটি খেলোয়াড়ের খেলা তার ভালো লাগে বলে জানান।
ক্ষমতাসীন দলের ১৪ দলীয় জোটের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় তারা কে কোন দলের সমর্থক। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, ব্রাজিলের পুরনো সমর্থক তিনি। আগে পরিবার নিয়ে খেলা দেখতে বসতেন তিনি। তবে ছোট দলগুলোর প্রতি বিশেষ সপ্ট কর্নার থাকে তার। রাত জেগে খেলা দেখার অভ্যেস রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মেয়ে এখন বিদেশে থাকে। সেখান থেকে মেইল করে খেলা দেখার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে সে। তিনি বলেন, সব খেলা না দেখলেও ব্রাজিলের খেলা তিনি দেখবেনই। জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সমর্থক ব্রাজিলের। বাংলাদেশের একসময়কার কৃতি ফুটবলার ও মোহামেডান দলের গোলরক্ষক ইনুর ছেলেও পিতার মতো ব্রাজিলের সমর্থক। তার স্ত্রী জোরালোভাবে কোনও দল সমর্থন না করলেও ব্রাজলের খেলা তার ভালো লাগে বলে জাসদ সভাপতি ইনু বাংলা ট্রিবউনকে জানান। সময় সুযোগ করে বিশ্বকাপ ফুটবলের সব খেলা দেখার চেষ্টা করবেন তিনি।
জাসদ (আম্বিয়া) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার সমর্থন দুই অঞ্চলের দু’টি দেশের মধ্যে প্রতি। তিনি ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলে ব্রাজিল ও ইউরোপের দেশ জার্মানির সমর্থন করেন। তিনি জানান, ভালো লাগে তাই ফুটবল খেলা দেখেন। তবে, জমি বিক্রি করে বা ভুরিভোজ করিয়ে খেলা দেখার মতো উন্মাদনা তার নেই।
সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়ার পছন্দ আর্জেন্টিনা। আর তার ১২ বছর বয়সী নাতির পছন্দ ব্রাজিল। খেলা দেখার সময় তাদের দুই জনের মধ্যে টক্করও লাগে বলে জানান সাবেক এই মন্ত্রী।
দল সমর্থনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ড. শাহাদাৎ হোসেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ নেই তাই এই মুহূর্তে তার কোনও দলের প্রতি সমর্থনও নেই। বাংলাদেশ যখন খেলবে, তখনই তার সমর্থনের প্রশ্ন আসবে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের পছন্দ শোষিতদের পক্ষে। তিনি জানান, তারা শোষিতদের অধিকারের জন্য রাজনীতি করেন। ফুটবলে সমর্থনও শোষিতদের পক্ষে। খেলায় অংশগ্রহনকারী দেশগুলোর মধ্যে যারা দুর্বল ও শোষিত তাদেরই তিনি সমর্থন করবেন।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের পছন্দ ব্রাজিল। ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সময় বের করে ব্রাজিলের খেলাগুলো দেখার চেষ্টা করেন।
বিজয়ী দলের সমর্থক জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি জানান. বাংলাদেশে খেললে হারুক জিতুক অবশ্যই তার প্রতি সমর্থক থাকতো। তবে, যেহেতু নেই তাই সিরিয়াসলি কোনও দেশের প্রতি সমর্থন থাকবে না। যে দলটি জিতবে তার প্রতি সমর্থন থাকবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের আগে পছন্দ ছিল ব্রাজিল। কিন্তু এবার কোন দল পছন্দ করবেন, তা এখনও ঠিক করেননি। তিনি জানান, আগে সবার খেলা দেখি তারপর চয়েস করবো। আগে থেকে কারো ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে বিপদ হতে পারে। হাওলাদারের স্ত্রী সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না আজীবনই ব্রাজিলের সমর্থক বলে জানান।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন